শরীর ভেতর দুর্বলতা অনুভব করলে অতিরিক্ত ঘাম প্রবণতা বেশি থাকে। কায়িক শ্রম ও কঠিন পরিশ্রম ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় শরীর থামতে পারে। কম তাপমাত্রায় বেশি পরিমাণ শরীর ঘামলে দুর্বলতার লক্ষণ। তখন শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঘামের মাধ্যমে বের হয়। এতে শরীরের মধ্যে দূষিত পদার্থগুলো কিডনির মাধ্যমে ছাকনি হয়। সাধারণত ব্যায়াম করলে শরীরের মধ্যে গরম ভাব বোঝা যায়। যার ফল হিসাবে ঘাম প্রবণতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া ভয়ের কারণেও শরীর থেকে ঘাম অনাগল বের হতে পারে।
আজকে আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে এসেছি অতিরিক্ত ঘামানোর হোমিও ঔষধ। ঘাম শরীর থেকে বের হওয়া যেমন অনেক ভালো তেমনি অতিরিক্ত ঘামের ফলে ফলের মধ্যে নানা রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে। বিশেষ করে শরীরের মধ্যে দুর্বলতা অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ঘামের জন্য কোন কাজে মন বসে না। নির্দিষ্ট সময় কাজটি করা সম্ভব না একবারে থাকে না। বিশেষ করে অমনোযোগী হয় বেশিরভাগ।
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
শরীরের মধ্যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিলে হঠাৎ করে ব্লাড সুগার কমে যাবে। স্বাভাবিক অবস্থায় অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি হয়। শরীরের মধ্যে বেশিরভাগ সময় হার্টের গতি কমে গেলে বুঝতে হবে হার্টের ব্লকের সমস্যা। হার্টের ব্লক জড়িত সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে বোঝা যাবে প্রচুর পরিমাণে ঘামানো। এই সময়ের পানির বেশি পরিমাণে পান থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত পানি পানের চাপ আসলে লেবু খেতে হবে। এতে করে পানি তৃষ্ণা কমে যাবে। বেশি পরিমাণ ঘামলে শরীরে হঠাৎ প্রচন্ড পরিমাণ মাথার যন্ত্রণা বেড়ে যায়। তাৎক্ষণিক অবস্থায় স্ট্রোকের মত মারাত্মক রোগে হতে পারে। মাথায় খিচুড়ির মতো নিউরোলজিক্যাল প্রাথমিক উৎসর্গ দেখা দিলে মাথায় রক্ত খনন হওয়া সম্ভব অনেকে থাকে।
অতিরিক্ত ঘামের কারণ নির্ণয়ের জন্য, একজন ডাক্তার আপনার চিকিৎসা ইতিহাস, লক্ষণ এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি সম্ভাব্য কারণ নির্ধারণ করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে, আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন রক্ত পরীক্ষা বা ইমেজিং পরীক্ষা।অতিরিক্ত ঘামের চিকিৎসা কারণ নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যেমন হালকা পোশাক পরা, প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা এবং ধূমপান ত্যাগ করা, উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, ওষুধ বা সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
- ইডিওপ্যাথিক হাইপারহাইড্রোসিস: এই অবস্থাটিতে, ঘামের কারণ অজানা। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
- থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে, শরীর বেশি ঘামতে পারে।
- ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে, শরীর ঘামতে পারে।
- মেনোপজ: মেনোপজের সময়, মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এটি ঘামের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
- অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা: কিছু অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা, যেমন জ্বর, সংক্রমণ, ক্যান্সার এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ওষুধ
ঘরোয়া পরিবেশে মাধ্যমে অতিরিক্ত ঘাম কমানোর ওষুধ তৈরি করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই হাতের কাছে সাদা পেস্ট ও চন্দনের গুড়া থাকতে হবে। চন্দনের গুড়ার সাথে সাদা পেস্ট ভালোভাবে মিশ্রণ করুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মিশ্রণ গুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত ঘামের জায়গায় ভালো করে লাগিয়ে দেন ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আক্রান্ত ঘামের জায়গাগুলোতে পরিষ্কার করুন। তবে সে ক্ষেত্রে সাধারণ পানিতে গোসল করবেন না। বেশি সমস্যা দেখা দিলে এমবিবিএস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ। পরামর্শ অনুযায়ী রেগুলার ওষুধ সেবন করলে অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি পাবেন।
অতিরিক্ত ঘাম (হাইপারহাইড্রোসিস) একটি সাধারণ অবস্থা যা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটায়। এই অবস্থায় শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম তৈরি করে, যা ব্যক্তির জন্য অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। এই ওষুধগুলি ঘামের গ্রন্থিগুলিকে সরাসরি বা ঘামের কারণ হওয়া স্নায়ু সংকেতগুলিকে বাধা দিয়ে কাজ করে।
- অ্যান্টিপার্সপিরান্ট: এই ওষুধগুলি ঘামের গ্রন্থিগুলিকে বন্ধ করে দেয়। অ্যান্টিপার্সপিরান্টগুলি সাধারণত বগল, হাত এবং পায়ের তালুতে ব্যবহার করা হয়।
- অ্যান্টিকোলিনার্জিকস: এই ওষুধগুলি ঘামের কারণ হওয়া স্নায়ু সংকেতগুলিকে বাধা দেয়। অ্যান্টিকোলিনার্জিকসগুলি সাধারণত মুখের শুষ্কতা, দৃষ্টি সমস্যা এবং মূত্রত্যাগ সমস্যার মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডপ্রেসেন্টস: এই ওষুধগুলি ঘামের কারণ হওয়া স্নায়ু সংকেতগুলিকে বাধা দেয়। ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডপ্রেসেন্টগুলি সাধারণত ঘুম, ক্লান্তি এবং ওজন বৃদ্ধির মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন: এই ইনজেকশনগুলি ঘামের গ্রন্থিগুলিতে সরাসরি প্রয়োগ করা হয় এবং তাদের ক্রিয়াকলাপকে ব্লক করে দেয়। বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশনগুলি সাধারণত 3-6 মাসের জন্য স্থায়ী হয়।
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর প্রাকৃতিক উপায় :
- হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
- ঘামের কারণ হওয়া খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- স্ট্রেস কমাতে শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন।
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
আধুনিক যুগোপযোগী সময়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কদর বাড়ছে। অত্যন্ত জটিল সমস্যা খুব সহজে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা সমাধান হচ্ছে। মানুষ দিন দিন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের উপর আস্থা রাখছে। অতিরিক্ত ঘামের নির্ধারিত জায়গায় গুলো বগল, গলা, পায়ের নিচের অংশ, হাতের তালু ও দুই চরুর রান। এই অংশগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের হবে। অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ দিলে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন। প্রথম অবস্থায় একবারে ফলাফল না পেলেও। দীর্ঘদিন হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করলে এর থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে হলে ধৈর্য থাকতে হবে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ফলাফল ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়। অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন হোমিওপ্যাথিক ঔষধের উপর।
- অ্যাকোনাইট নাইটস্কালর: এটি একটি শক্তিশালী ঔষধ যা হঠাৎ করে শুরু হওয়া ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শীতল বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় হয় এবং শরীরের উপরের অংশে বেশি হয়।
- আর্সেনিক অ্যালবা: এটি একটি ঔষধ যা ঘুমের সময় ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের নিম্ন অংশে বেশি হয় এবং ঘামের সাথে অস্বস্তি এবং উদ্বেগ থাকে।
- ব্রায়োনিয়া অ্যালবা: এটি একটি ঔষধ যা মানসিক বা শারীরিক চাপের কারণে ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের উপরের অংশে বেশি হয় এবং ঘামের সাথে শ্বাসকষ্ট এবং বুকে ব্যথা থাকে।
- ক্যামোমিলা: এটি একটি ঔষধ যা জ্বর বা সর্দি-কাশির কারণে ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের উপরের অংশে বেশি হয় এবং ঘামের সাথে জ্বর, মাথাব্যথা এবং কাশি থাকে।
- হিপারিকাম পারপুরেয়াম: এটি একটি ঔষধ যা আঘাত বা অপারেশনের পরে ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের উপরের অংশে বেশি হয় এবং ঘামের সাথে ব্যথা এবং অস্বস্তি থাকে।
- নাক্স ভমিকা: এটি একটি ঔষধ যা মানসিক উদ্বেগ বা উত্তেজনার কারণে ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের উপরের অংশে বেশি হয় এবং ঘামের সাথে অস্বস্তি এবং উদ্বেগ থাকে।
- সালফার: এটি একটি ঔষধ যা দীর্ঘস্থায়ী ঘামের জন্য কার্যকর। ঘাম সাধারণত শরীরের সমস্ত অংশে হয় এবং ঘামের সাথে অস্বস্তি এবং দুর্গন্ধ থাকে।
Read more about: appkod.net